[ad_1]
Reading Time: 2 minutes
“শত শত মুখ হায় একাত্তর
যশোর রোড যে কত কথা বলে,
এত মরা মুখ আধমরা পায়ে
পূর্ব বাংলা কোলকাতা চলে”
অ্যালেন গিন্সবার্গের কবিতা থেকে মৌসুমী ভৌমিকের বাংলায় অনূদিত উপরের দুটি বাক্যই জানান দেয়, ৭১ এর সাথে কতোটা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে যশোর রোড! এজন্যই যশোর রোড কেবলমাত্র একটি সড়ক নয়। কারো কাছে তা মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য, কারো কাছে অসংখ্য নির্মমতার স্মৃতিচিহ্ন, আবার কারো কাছে আজন্ম বয়ে বেড়ানো আলাদা এক আবেগ। তাই আজকের লেখায় আমরা হেঁটে যাব, ঐতিহাসিক সেই যশোর রোড ধরে। জানব এর প্রাচীন ইতিহাস, আর এর সাথে মিশে থাকা ৭১-এর ঐতিহ্য।
মানচিত্রে যশোর রোড
প্রিয় যশোর রোড চলে গেছে বাংলাদেশ আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বুক চিরে। যার পথের শুরু বাংলাদেশের যশোর থেকে, আর শেষ বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত বেনাপোল-পেট্রাপোল পেরিয়ে সেই কলকাতায়। ইতিহাস বলছে, যশোর থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল-বনগাঁ-হাবড়া-বারাসাত পার হয়ে কলকাতার শ্যামবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এই ১২৫ কিলোমিটারের যশোর রোড। বাংলাদেশের অংশটুকু যশোর-বেনাপোল সড়ক নামে পরিচিত হলেও পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে একেবারে কলকাতা বিমানবন্দর ছাড়িয়ে নাগের বাজার হয়ে শ্যামবাজার পর্যন্ত চলে যাওয়া এই সড়ককে যশোর রোড নামেই জানে মানুষ। এই বিস্তৃত যশোর রোডের ৩৫ কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশে, বাকিটা পশ্চিমবঙ্গে।
৭১-এ যশোর রোড
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১ আর যশোর রোড এক সূত্রে গাঁথা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতা থেকে বাঁচতে পূর্ব বাংলা থেকে অসংখ্য মানুষ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল ভারতের সীমান্তে। গাড়ি বা ট্রেন ভ্রমণ তখন এই পালিয়ে বেড়ানো মানুষগুলোর জন্য নিতান্তই বিলাসিতা। কয়েক হাজার বাঙালি তখন এই যশোর রোড ধরে পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিয়েছিল দীর্ঘ পথ, শুধুমাত্র শরণার্থী শিবিরে একটু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। কিন্তু ৭১ এর বাস্তবতা এত সহজ ছিল না। বহু পথযাত্রী নিঃস্ব ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় হাঁটার কষ্ট সহ্য না করতে পেরে মারা যান এই যশোর রোডের বুকে। অনেক রোগাক্রান্ত শিশু মায়ের কোলেই মারা যায় এই পথ দিয়ে যেতে যেতে।
ঠিক এই সময়েই ভারতে এসেছিলেন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ। যশোর রোড ধরে হাজার হাজার শরণার্থীর পথচলার ছবি ছাপ ফেলেছিল তার হৃদয়েও। যার বর্ণনাতেই তিনি লিখেছিলেন ১৫২ লাইনের কবিতা, ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। গিন্সবার্গের ওই কবিতায় সুর দিয়ে সেই গানকে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেন বব ডিলান। আর এভাবেই দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একটি রাস্তায় অখ্যাত কতগুলি নিরীহ মানুষের যন্ত্রণা পৌঁছে যায় সারা বিশ্বে। ঠিক এতোটাই হৃদয়স্পর্শী ছিল ৭১ এ যশোর রোডের পটচিত্র।
যশোর রোডের প্রাচীন ইতিহাস
কেবল ৭১ ই নয়, এই রাস্তার রয়েছে আরও এক সুপ্রাচীন ইতিহাস। ১৮৪০ সালের দিকে নড়াইলের জমিদার কালী পোদ্দার তাঁর মায়ের গঙ্গাস্নানের জন্য যশোরের বকচর থেকে কলকাতার কালীঘাট পর্যন্ত এই রাস্তা নির্মাণ করেছিলেন। সেই সময়ের দুই লক্ষ আটান্ন হাজার টাকা খরচ করে কয়েক হাজার শ্রমিকের কঠোর পরিশ্রমে ১৮৪২ সালে সম্পূর্ণ হয়েছিল নির্মাণ কাজ। এরপর জমিদার কালী পোদ্দার রাস্তায় ছায়ার জন্য দু’ধারে প্রচুর বৃক্ষ রোপণ করেন। শতবর্ষী এই গাছগুলো এখনো দাঁড়িয়ে আছে কালের স্বাক্ষী হয়ে।
আজও যশোর রোডের দুই পাশের শতবর্ষী বৃক্ষ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এখন যশোর রোড আরও বেশি প্রশস্ত। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলেই যা অর্জন করেছে আন্তর্জাতিক সড়কের মর্যাদা। তাই, বিজয়ের মাসে একাত্তরকে ফিরে দেখতে, আপনিও হেঁটে আসতে পারেন যশোর রোডের উপর দিয়ে।
[ad_2]